আমাদের সম্পর্কে

সমন্বিত সিলেবাস সম্পর্কে কিছু কথা
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম।
রাশাদ একাডেমি সনাতনী দরসে নেজামী ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে প্রণীত সিলেবাসের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। দুই ধারার শিক্ষা সিলেবাসে যে ব্যবধান বিরাজ করছে, তার অবসান ঘটিয়ে উভয় ধারাকে একীভূত করার একটি বৈপ্লবিক প্রয়াস। সমকালীন প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর যথোপযুক্ত সেবার উদ্দেশ্যে এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় শিক্ষা আমাদের আত্মা আর বৈষয়িক শিক্ষা আমাদের অলংকার। এ দুই শিক্ষার মাঝখানে কোনো দেয়াল তৈরি করার সুযোগ নেই। মুসলমান হিসেবে এ উভয় শিক্ষাই আমাদের প্রয়োজন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন সামান্য জমাট রক্ত থেকে। পড়! তোমার প্রভূ অতি সম্মানীত। যিনি কলম দ্বারা শিখিয়েছেন। মানুষকে এমন বিষয় শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।’ — আল কুরআন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘জ্ঞান মুমিনের হারানো সম্পদ। যেখানেই পাবে মুমিনই এর অধিক হকদার হবে।’ — আল হাদিস
এদেশের ক্ষণজন্মা মনীষী, যুগশ্রেষ্ঠ দাঈ, আশরাফ আলী থানবী রহ.Ñ এর খলিফা, সকল ধর্মীয় কাজের অগ্রপথিক, মুজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. বলেছেন,
‘ধর্মহীন কর্মশিক্ষা এবং কর্মহীন ধর্মশিক্ষা জাতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।’
দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতিসন্তান মুফতি মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. বলেন,
‘দীন ও দুনিয়ার শিক্ষা যেদিন থেকে বিভাজিত হয়েছে, সেদিন থেকে উম্মাহর দুর্ভাগ্য শুরু হয়েছে।’
আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডেলা বলেন,
Education is the most powerful weapon, which we can use to change the world. শিক্ষা এমন এক শক্তিশালী অস্ত্র, যা দ্বারা আমরা বিশ^কে বদলে দিতে পারি।
দরসে নেজামী বা কওমী সিলেবাস যখন প্রণীত হয়েছিল, তখন সমকালীন চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের জন্য তা ছিল সবচে উন্নত ব্যবস্থা। তাতে তাফসীর, হাদিস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য ও মৌলিক গ্রন্থাদির পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক ও অভিজ্ঞতা নির্ভর বিষয়াবলিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইসলামী জ্ঞানবিদ্যা মানবজীবনের বৈষয়িক দিকগুলোতে প্রয়োগ করার জন্য এবং সমকালীন সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবেশের গতির সাথে ইসলামের প্রায়োগিকতা প্রমাণের জন্য সুচিন্তিতভাবে প্রয়োজনীয় সব বিষয় সিলেবাসভুক্ত রাখা হয়েছিল। এ কারণেই দরসে নেজামীর শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাঝে কোনো অপূর্ণতা থাকত না।
কিন্তু আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে ঔপনিবেশিক শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে, মুসলিম মনীষীগণ দীনের মৌলিক দিকগুলো রক্ষার প্রতি মনোযোগ দেন। ফলে আধুনিক শাস্ত্রাদি ও বিষয়সমূহের যে বিশেষায়ণ ও সম্প্রসারণ ঘটে, তা থেকে ধমীর্য় শিক্ষালয়গুলো বঞ্চিত থেকে যায়। এভাবে ধর্ম শিক্ষা এবং কর্ম শিক্ষা পরস্পর আলাদা হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশসহ মুসলিম দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু তারা আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হতে পারেনি। এসব ব্যাপারে তারা প্রধানতঃ পশ্চিমা দেশগুলোর নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল।
মুসলিম দেশগুলোতে অন্যতম প্রধান অবহেলিত ক্ষেত্র শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী ভাবধারা ও বিষয়বস্তুসমূহ যেমন উপেক্ষিত, তেমনি মুসলিম তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী দীক্ষা দেওয়ার ও গড়ে তোলার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোতে চালু রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দরসে নিজামী সিলেবাস, যাতে দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ সবচে উন্নত পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সৃষ্টি হওয়া নতুন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এখানে মানবীয় জ্ঞানসমূহ এবং স্থানীয় ও সমকালীন আন্তর্জাতিক ভাষার চর্চা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অথচ আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে নতুন কাঠামো অনুযায়ী। সেখানে কওমী মাদরাসার স্নাতকরা সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে সামগ্রিক উন্নতির ক্ষেত্রে জাতি এসব মেধাবী সন্তানের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর কওমী মাদরাসার স্নাতকরা থেকে যাচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বাইরে। এজন্য মুসলিম উম্মাহর এখন বড় প্রয়োজন ইসলাম শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী ধারার সাথে আধুনিক জাগতিক জ্ঞান বিদ্যার সমন্বয় সাধন এবং শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় জ্ঞান, দর্শন ও নৈতিকতার পাশাপাশি প্রচলিত বিষয়সমূহেও উপযুক্ত করে তোলা। যেন তারা রাষ্ট্র ও সমাজের সবক্ষেত্রে কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। তাদের আচরণ ও কার্যকলাপে যেন ফুটে ওঠে ইসলামী ভাবধারা ও নৈতিকতার ছাপ। এ লক্ষ্যেই আমরা কওমী মাদরাসার ঐতিহ্যবাহী সিলেবাস ও জাতীয় কারিকুলামের সমন্বয়ে নতুন শিক্ষাধারা চালু করেছি।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এই সিলেবাসের উদ্দেশ্য এমন কিছু আলেমে দীন তৈরি করা, যারা দরসে নেজামীর মেশকাত জামাত সম্পন্ন করার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার স্নাতক স্তরও সম্পন্ন করবে। দাওরায়ে হাদিসের পর মাস্টার্স করবে। তারা একই সাথে উভয় ধারার শিক্ষায় সমৃদ্ধ হবে। ধর্মীয় ও বৈষয়িক ক্ষেত্রে সমানভাবে সেবা করার দক্ষতা অর্জন করবে।
আমাদের বিশেষত্ব
বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ও জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের্র সিলেবাস আনুসরণ।
ইসলাম ও আধুনিকতার সমন্বয় সাধন।
একই প্রতিষ্ঠানে দাওরা ও জেনারেলে স্নাতক (অনার্স) সম্পন্ন করার সুযোগ।
স্কুল বোর্ড ও কওমী মাদরাসা বোর্ডে ঈর্ষনীয় ফলাফল।
বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাসফরের আয়োজন।
প্রজেক্টরের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্লাস গ্রহণ।
প্রত্যেক ছাত্রের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
আমাদের বৈশিষ্ট্য
অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদান।
ছাত্রদেরকে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তোলার প্রচেষ্টা।
আরবি ও ইংরেজিতে অনর্গল কথোপকথনের যোগ্য করে তোলা।
বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা।
শিক্ষকের মাধ্যমে আবাসিক ছাত্রদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ।
শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের তরবিয়তের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
দাওয়াতি ও ইসলাহি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ।
অবসরে বই পড়া, শরীরচর্চা, সাহিত্যচর্চা ও লেখালেখির প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।
মেধার ভিত্তিতে পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
১. দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে এ সিলেবাসের আওতায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা।
২. কেন্দ্রীয় বোর্ড গঠন করে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা।
৩.বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষা বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করা। যার আওতায় রাশাদ একাডেমিতে স্নাতক ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা ঐসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভ করবে।
৪. নারীদের ইসলাম শিক্ষা প্রসারে প্রস্তাবিত সিলেবাসের আওতায় মহিলা শাখা প্রতিষ্ঠা করা।
৫. দেশের ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভিসি ও অন্যান্য শিক্ষাবিদদের আমন্ত্রণ করে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা এবং মত বিনিময় করা।
৬. প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সুপ্রশস্ত ভূমির ব্যবস্থা করা। ভূমির বন্দোবস্ত করে
একাডেমিক ভবনসমূহ নির্মাণ করাই এই মূহুর্তে আমাদের অগ্রাধিকারমূলক প্রধান পরিকল্পনা।
শুভার্থীদের নিকট বিনীত আরজ
ইসলাম, দেশ ও জাতির খেদমতের এক মহান ব্রত নিয়ে আমরা এই মহৎ উদ্যোগের সূচনা করেছি। আশা রাখি, আমাদের এই উদ্যোগ সফল হলে এর দ্বারা ইসলামের যেমন উপকার হবে তেমনি মুসলিম উম্মাহ তাদের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার সাহস ও হিম্মত পাবে। এই উদ্যোগ একার পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা ও মঙ্গল কামনা। তাই আমরা সর্বস্তরের আলেম, বুদ্ধিজীবী ও সুধী সমাজের কাছে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা কামনা করছি।
মুহাম্মাদ সালমান
প্রতিষ্ঠাতা, রাশাদ একাডেমি
প্রিন্সিপাল/ মুহতামিম,
মাদরাসা দারুর রাশাদ